আগরতলা, ৪ জুলাই ২০২৫: শহরের অন্যতম প্রাচীন ও সুনামধন্য বিদ্যালয় মহারানী তুলসীবতী উচ্চতর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগ আজ গভীর সংকটে। শিক্ষার আলো যেখানে ছাত্রীদের বিকাশের পথ দেখানোর কথা, সেখানে ঘটছে একের পর এক নিন্দনীয় ও হৃদয়বিদারক ঘটনা— যা শিশুদের শিক্ষার অধিকার ও মানসিক নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।
২ জুলাই, নিয়মমাফিক স্কুল ইউনিফর্মে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও, শুধুমাত্র “বুধবারের নির্দিষ্ট টি-শার্ট” না পরার কারণে প্রাথমিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকা টুলু রানী দেবী-র নির্দেশে চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্রী রিদ্ধীমা দেব ও রিদ্ধীসা দেব-সহ আরও কয়েকজন ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এই অজুহাতে শিশুদের স্কুলচত্বর থেকে বের করে দেওয়ায় অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত।
এই ঘটনার প্রতিবাদে তাঁদের পিতা শ্রী রামব্রত দেব, বলেন—
“শিক্ষা কি কেবল নিয়ম পালনের খাতা, না কি শিশুদের বিকাশের অধিকার? আমার কন্যারা সেই দিন পাঠগ্রহণের সুযোগ হারিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের মনোবল।”
অভিভাবকদের অভিযোগ, এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। বহু ছাত্রীর সাথেই এমন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শিশুদের ক্লাসের মাঝপথে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা, মানসিক চাপে ফেলা, স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা বহুবার ঘটেছে। যার ফলে বহু ছাত্রী বাধ্য হয়ে স্কুল পরিবর্তন করেছে।
১ জুলাই, স্কুলে ছাত্রীদের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট বিতরণের অভিযোগও উঠেছে। জানা যায়, জুন মাসেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ঔষধ ছাত্রীরা খেয়েছে। বিষয়টি সামনে আসে অভিভাবক ও সংবাদমাধ্যমের নজরে আসার পর।
ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন কন্ট্রোল এওয়ারনেস সোসাইটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তাঁদের মতে—
“এটা শহরের বনেদি স্কুলের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ শিশুদের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।”
একাধিক অভিভাবক বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন—
“আমাদের সন্তানদের এই ধরনের ঔষধ দেওয়া হচ্ছে ভাবতেও কষ্ট হয়। এটা অবিশ্বাস্য!”
অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলে নেই পরিষ্কার পানীয় জলের ব্যবস্থা। শিশুরা নিজেদের সঙ্গে জল নিয়ে আসতে বাধ্য। টয়লেট পরিষ্কার নয়, যা ছাত্রীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি বিদ্যালয়ে সপ্তাহে তিনদিন মাত্র ক্লাস নেওয়া হচ্ছিল বলে জানা গেছে। শিক্ষার মান ও নিয়মিত পাঠদান নিয়েই অভিভাবক সমাজে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে।
শিক্ষক নয়, যেন ত্রাস
অভিভাবকদের প্রশ্ন — একজন শিক্ষিকার ভূমিকা কি শুধু শাস্তিদান? শিক্ষক কি ভয় সৃষ্টি করার মানুষ, না কি ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষা দেওয়ার পথপ্রদর্শক?
টুলু রানী দেবীর বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ বিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা।
শ্রী রামব্রত দেব-সহ অভিভাবক মহলের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে—
অবিলম্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক
প্রাথমিক বিভাগে যোগ্য, সহানুভূতিশীল ও দায়িত্ববান শিক্ষিকা নিয়োগ নিশ্চিত করা হোক
বিদ্যালয়ে নিয়মিত তদারকি ও অভিভাবক সংলাপ বজায় থাকুক
শিশুরা যেন আর কখনো এমন আচরণের শিকার না হয়, তার সুনিশ্চিত ব্যবস্থা নেওয়া হোক
এই আন্দোলন কেবল এক পরিবারের নয়—
এটি সমস্ত শিশুর, সমস্ত অভিভাবকের এবং সচেতন নাগরিকদের সম্মিলিত দায়িত্ব ও লড়াই।
শেষে একটাই প্রশ্ন রেখে যাওয়া প্রয়োজন:
“আলো দেওয়ার কথা যে শিক্ষা, সে কি আজ অন্ধকারের মুখোমুখি?”
আসুন, শিক্ষা হোক সহানুভূতির—ভয়ের নয়।