আগরতলা, ২৫ জুলাই, ২০২৫ঃ
ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় আবারও দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগের তীর এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ফাইনান্স অফিসারের দিকে, যিনি জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কর্মী। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর তিনি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তবে মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে বিপুল অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাজের টেন্ডার বরাদ্দের দায়িত্ব ফাইনান্স শাখাকেই দেওয়া হয়েছে, যা দেশের অন্য কেন্দ্রীয় বা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চর্চার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত। সাধারণত এই কাজটি রেজিস্ট্রার শাখার তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে, কিন্তু ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দায়িত্ব ফাইনান্স শাখার অধীনেই রাখা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নীতিমালার সম্পূর্ণ বিরোধী এই পদক্ষেপ।
অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩০শে এপ্রিল ফাইনান্স অফিসার ও তাঁর শাখা প্রায় ৪২ লক্ষ ১৬ হাজার ৭০৬ টাকার একটি টেন্ডার বরাদ্দ করেন কলকাতার জাদবপুর এলাকার সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত একটি কম্পিউটার সেন্টারকে। কাজ ছিল ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০টি কম্পিউটার বসানোর। প্রতি কম্পিউটারের মূল্য ধরা হয়েছে ৫৯৫৫৮ টাকা। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে একজন ফাইনান্স অফিসার এত বড় অঙ্কের টেন্ডার এককভাবে বরাদ্দ করতে পারেন?
বিশ্ববিদ্যালয় মহলে গুঞ্জন, গভর্নমেন্ট ই মার্কেট প্লেইজ ওয়েবসাইট ব্যবহারের নাম করে আগেভাগেই জাদবপুরের ওই কম্পিউটার কোম্পানিকে দরপত্র পাঠানো হয়েছিল, যাতে তারা সহজেই টেন্ডার জিতে নিতে পারে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে দাবি করছেন অনেকেই।
এছাড়াও আরও এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট নম্বর ৩ থেকে প্রধান প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য আগে বরাদ্দ ছিল ২৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু নতুন ফাইনান্স অফিসার যোগদানের পর এক রাতের মধ্যেই এই বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ লক্ষ টাকায়!
জানা গেছে, এই দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ সহ ‘সম্প্রতি’ নামে এক সংস্থা শিক্ষা মন্ত্রকে অভিযোগ জানিয়েছে। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক ফাইনান্স অফিসারের বিরুদ্ধে আলাদা তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ প্রশাসনিক আধিকারিক, অধ্যাপক ও কর্মচারীরা এই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছেও অভিযোগ পাঠানো হয়েছে, যাতে ক্রাইম ব্রাঞ্চের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়।
বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য যে, এই প্রথমবার জাদবপুরের কোনো কম্পিউটার কোম্পানি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ পেল। অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ফাইনান্স অফিসার নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কোম্পানিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্যই এই বরাদ্দ করেছেন।
ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধারাবাহিক দুর্নীতি শিক্ষার পরিবেশকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে বলেই মত শিক্ষাজগৎ ও সচেতন নাগরিকদের। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং নিরপেক্ষ তদন্তই এখন সময়ের দাবি।