ড: উত্তম সাহা
‘ইকির মিকির চাম চিকির’ পুরোনো কায়দায় জননীর রূপকথার গল্প শুনানো- ‘একে একে দুই, দু-দুগুনে চার’
‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে’ কত কি গল্প শুনানোর প্রচেষ্টা চলছে আর রূপকথার গল্পে বিভোর
হয়ে শিশু তখন ঘুমিয়ে আছে মায়ের কোলে। ধলেশ্বরস্থিত তরুণ সংঘের দারুণ দুর্গোৎসবের উপস্থাপনা। চলে গেছিলাম
পঞ্চাশ বছর আগে। ভাবছিলাম, মা-এভাবেই ঘুম পাড়াতেন আর বাবা শীতল পাটিতে আমাদের তিনজনাকে নিয়ে অ, আ,
ক, খ-তে হাতে খড়ি দিতেন। ছোট্ট একটা অ্যালুমিনিয়ামের বাক্সে ‘বাল্যশিক্ষা’ আর গোটা দুয়েক খাতা নিয়ে চলতাম স্কুলে।
পাছে মাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সিকি বা আধুলি আদায় করে নিতাম কেননা চিড় বা আইসক্রীম খাওয়ানোর পালা আজ
আমার। হাফ প্যান্ট, ঢোলকা আকাশী রঙ্গের জামা আর কাপড়ের সু-জুতো। লেইজার পিরিয়ডে তপ্ত রোদে মাঠে দৌড়ঝাপ,
কবাডি, গোলছুট, দাঁড়িবাধা কত কি রকমের খেলাধূলা। সময়ের সাথে সাথে বড়ো হওয়া। এবারে ফুটবল, ক্রিকেট, লং বা
হাই জাম্প। মেসি বা রোনাল্ডো অথবা শচীন বা বিরাট না হতে পারি তবে ফুটবল বা বাইশ গজে ৪০ বৎসর আগে কম
দাপুটে ছিলাম না। শো-কেসে রাখা শীল্ড গুলো আজও জানান দেয় মাঝে মাঝে ওকি মারি, আলমারীর কাঁচ সরিয়ে
ন্যাকড়া দিয়ে মুছে রাখি বৈকী উদ্দেশ্য একটাই- স্মৃতি আর গল্পকথায় এ প্রজন্ম যদি কিছুটা সময় মাঠে কাটিয়ে দেয়, শরীর
চর্চাও হলো আর মনের প্রশান্তি না হয় হলো বোনাস।
কৈশোর থেকে যৌবনেও পা রাখলাম, ঠাহর করতে পারিনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চৌহদ্দিতে পা রাখতেই জীবনের
ফেলে আসা দিনগুলোর কেবলই রোমঞ্জুন হতে লাগল এই ধরুন বছর ত্রিশ আগের কথা।
ছাত্র-রাজনীতি, প্রতিযোগিতা, স্বার্থ তথা সরলতার অনুপস্থিতির মিশেলে কখন যে মধুমাখা বিদ্যালয় জীবন, সেই
কেঁটে যাওয়া ঘুরির পেছনে দৌড়, দৌড় আর দৌড়, বাজার ফেরত পর্বে পকেটের ১টাকা-২টাকা করে করে গত তিনমাসের
৪৭ টাকা সযত্নে জমানো ১৪০২ বঙ্গাব্দের পূজোর হাত খরচ। বাবা টের পেতেন, না বোঝার ভান করতেন। সন্ধ্যায়
বেলবেটম প্যান্ট, হিল তোলা জুতো পরে ফোস্কা যন্ত্রণায় হাঁটতে হাঁটতে মূর্তি দেখার অদম্যতা, হোটেল রাধে রাধে-তে
৫০ পয়সার ঘুন্নি, আর দামী জিনিস হিসাবে অষ্টমী বা নবমীতে নির্মলা রেস্টুরেন্টে ১০ টাকার পোলাও ঘুঘনি মাংসের
ঝোল থাকতো গন্ধ নিতে। ভয়ে ভয়ে আস্ত করে মাকে ডেকে ঘরে ঢোকা, বাব্বা রাত সাড়ে ন’টা হয়ে গেছে? পান থেকে চুন
খলে রক্ষা নেই- ভাগ্যিস বাবুজি ততক্ষণে গগনভেদী গর্জনে নাক ডেকে চলেছেন।
যৌবনের বেশ কিছু বসন্ত পেরোতেই জীবন সঙ্গী নির্বাচন তারপর ২ থেকে ৩, আরো কিছু বসন্ত পেরিয়ে এবারে
চার-এ পদার্পন। না বিশ্বাস করুন, মা-বাবা কেউ ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ জাননি। ওহ্-নচিকেতার কথা বলছেন? হ্যাঁ যারা ভাগ্যহীন
আর ভাগ্যহীনা তারা আছেন বলেই তো সুন্দর ক্যাপশানে সুসজ্জিত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ আজ লোকে লোকারণ্য। কলেবর বেড়েই
চলছে। ঘটা করে কিছু ব্যস্ত নায়ক নায়িকারা (স্বামী, স্ত্রী) বছরে একবার কিছু না কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে পাপ ধোয়াতে চলে
যান– আর বাড়ী এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, বাঁচা গেল বছরখানেক। যেন গঙ্গাস্নাত।
সংহতি ক্লাবের ‘পাঠশালা’ দৈনন্দিন জীবনের কঠোর ছক্কাধা রুটিনে হাঁফিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের আর্তনাদ শুনলাম।
ব্যাগভর্তি বই-খাতার ওজনে ব্যতিব্যস্ত শিশুদের ক্রন্দন শুনলো রাজ্যবাসী। পাছে একটু কিছু পরিবর্তন আনা যায়?
দেশাত্মবোধকে জাগ্রত করতে এবারে এগিয়ে এলো ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ক্লাব’ মহান ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী
তথা বরেণ্য দেশহিতৈষীদের ছবি ও আলোক সজ্জায় সাজিয়ে তুলে চলতি প্রজন্মকে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, দেশপ্রেমের বার্তা
দিলেন
আর ড্রাগস্ নয়, ‘ড্রাগের নেশা সর্বনাশা’ রক্তদান মহৎ দান আসুন গাছ লাগাই, ‘গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে গর্জে
উঠি’-নানান ক্যাপশানে সুসজ্জিত প্যান্ডেল চোখে পড়লো প্রগতি প্লে সেন্টার, ব্লু-লোটাস ক্লাবে। সবুজের প্রাধান্য বিস্তারে
এগিয়ে এসেছেন ‘শতদল ক্লাব’ ব্লাড মাউথ ক্লাব আবারও ‘গুমনাম বাবা’ মানে ‘আমি সুভাষ বলছি’ কে স্মরণ করিয়ে
দিল পার্বতী রাজ্যকে একটা দূরদর্শী দেশনায়ককে, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে যার প্রতিদান এই রচনায় আবার মনে না
করিয়ে দিলেও অসম্পূর্ণতা থাকবে না। তবে বার বার স্মৃতিচারণায় মানসিতার পরিবর্তনের কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা আছে বলেই
হয়তো পুরনোকে বারংবার টেনে আনা।
শ্রদ্ধা জানানো হল ‘মায়াবিনী’ সংগীতের জাদুকর, গিনিজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে চতুর্থ স্থানাধিকারী জুবিন গর্গকে, শশীশ্রীমতি হীরা দে-কে (কলাতীর্থের নৃত্যগুরু) আরো কত স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বকে যারা এই মহান ভারতবর্ষকে পৃথিবীর
মানচিত্রে বার বার নূতন মুকুটে গৌরবান্বিত করেছেন।
উৎসব-মহোৎসবে রূপ নেবে সেটা ভবিতব্য বলতে পারেন। মনের দিক থেকে একটা উৎসাহ-আনন্দ স্রোত,
কাজ করে সেই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের দেবী দুর্গার মহালয়ার ভোর থেকেই। আপনার মতো আমারও তাই।
তাই। তবে একটু ফারাক ছিল ৫৭টি বসন্তের মালিক আমি। পূব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ দেখেছি অনেক, শুনেছি
অনেক উপলব্ধির হিসেবটাও কম বলতে পারবেন না। সেই চীন থেকে শুরু করে নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশ, আবার
মালয়শিয়া-সিঙ্গাপুর-শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপ, শেষে দুবাই-ভিয়েতনাম। অভিজ্ঞতার নিরিখে, বাস্তবতার কঠিন সময়ে এবারের
চার পাঁচটা দিন– একটু অন্য স্বাদে স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করেছি সংক্ষেপে শেয়ার করার খুব লোভ হচ্ছে দিব্যি বলছি।
চাওয়ালায় বসে 2nd class quality ফিস্ ফিঙ্গারে মুখ দিতেই ঝঝন্ করে একটা আওয়াজ, চিনেমাটির
একটা ডিশ মাটিতে পরে খানখান। কাচটি হাত থেকে পড়তেই মালিকের সপাট থাপ্পর। কালো হাস্প্যান্টে আর কালো
গোলগলা গেঞ্জি পরিহিত রম্যরচনার প্রথম দুর্গোৎসবের শহীদ। হবে হয়তো দীনু, তপু বা টিটন, অঝোড় কান্নায় দেওয়ালে
গা রেখে হয়তো ভাবছে, কাল নিশ্চয়ই আমাকে আর কাজে নেবে না, রাতেও খাবার দেবেনা। চোখ পড়লো কালো
গেঞ্জিতে caption টা– Uday (উদয়) ১৫ কি ১৬ হবে বয়স বড়জোর। এখানে শিশু শ্রমের বালাই নেই। বুঝতেই
পারিনি কবে হবে উদয়? খেতে পারলাম না ফিস্ ফিঙ্গার, স্থান ত্যাগ করে সেদিনের মতো বাড়ী চলে এলাম। ভাবছিলাম,
দিনু, তপু বা টিটনের মা-রা হয়তো ভাবছে আমার সোনা রোজগার করছে। ভালো ভালো শহরে চাইনিজ খাবার খাচ্ছে
বাছা বেঁচে থাক্ তুই। এটাই ছিল সপ্তমী সন্ধ্যার নাম্চা।
বাচ্চারা যথেষ্ট বড়ো হয়ে গেছে। এখন আর ঐ গ্যাসভর্তি দড়িবাঁধা বিভিন্ন বাঘ, সিংহ, হরিণ-কাঠবিড়ালী রূপী
বেলুন ওদের সাড়া দেয় না। কিন্তু অষ্টমীর সান্ধ্য উৎসব হাটে ফেরিওয়ালাকে দেখে কিনতে ইচ্ছে হলো। জানি না কি
উদ্দেশ্যে — তবে ওর লভ্যাংশ ওর সংসারের কোন ছোট্ট চাহিদা পূরণ করতে পারে এই ভাবনায় এগিয়ে যেতেই ওর হাত
থেকে ফস্কে গেল ২-৩টি গ্যাস বেলুন, অনেক উঁচুতে, আস্তে আস্তে চোখের সীমানা পেরিয়ে। মাত্র ১০০ টাকায় কিনলাম
একটা। ছোট বল্ল- কেন কিনলে এটা? বল্লাম বুঝবি একদিন ঠাঁই তাকিয়ে আছে ফেরিওয়ালা আলোকজ্জল আকাশে—
সেই হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের দিকে ফ্যালফ্যাল করে মহোৎসবের দ্বিতীয় এপিসোড বলতে পারেন।
ঘটে গেল এক বীভৎস আবেগের এপিসোড, বা বলতে পারেন Digital age-এর AI বা Chatgtp Culture-এর
শুরুবাত। স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানের সামনে স্বামীজিকে স্বাক্ষী রেখে ‘সুরাপিত নন্দিতা’ তার Digital প্রেমিকের সামনে
বাবাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, আর top climax time-এ সপাট চর-থাপ্পর, কি নয়। বিষয়বস্তু জানতে পারিনি।
তবে লজ্জা অপমানে বিধ্বস্থ পিতা কাঁদতে কাঁদতে যখন নিজেকে আড়াল করে চলে গেল ঠিক তখনই তথাকথিত
Digital Society-র একদল যুবক এসে গর্বিত প্রেমিক-প্রেমিকাকে সসম্মানে স্থান ত্যাগ করতে সাহায্য করলো। স্বামীজি
হাসছেন না কাঁদছেন বোঝা যায়নি। তবে যে পিতার শক্ত কাঁধে চরে সন্তান বড় হয়েছে সেই পিতার এই মূল্যবান উপহার কি
মানবিক বিকাশের ইঙ্গিত করেনা? ভাবনার আকাশে কালো ধোঁয়া।
শুনলাম ‘রাজ্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে’ বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ট্রায়াল করা হয়। আর তার সঠিক
নির্বাচনের পরই রাজ্যের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতগুলি বিতরণ করা হয়। এখন আমন ধানে শীষ বেড়িয়েছে,
ধান পরিপক্ক হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা তথ্য সংগ্রহ করছেন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান বলতে পারেন। কিন্তু
পাশাপাশি যে বেকার দামাল ছেলেটি বা সুকান্তের আঠারো বছর বয়সের উন্মাদ ছেলেটি ছট্ফট্ করছে, যার বাইকের তেল
শেষ হয়ে গেছে যে নাকি নবমীর রাতে বা দশমীর কার্নিভালে বুলেটে হাওয়া লাগিয়ে রাজপথ দাপড়ে চলবে বা
কোজাগরি লক্ষ্মীপুজোর রাতকে রঙিন জলে ভাসাবে, তার কাছে সদ্য পরিপক্ক ধানের মূল্যই বা কি? সাত সকালে উঠে
শুলাম গোছা-গোছা ধান কেটে লক্ষ্মী পূজোয় ঘৃতাহুতি করতে বিক্রি করে বুলেটের তেলের খরচ, সিগারেট আর লালজলের
ব্যবস্থা করেছে। হয়ে গেছে গবেষণা। তবে তার চাহিদা বা প্রয়োজনকে অস্বীকার করছি না। সে সেকালের নয় গো —
একালের Dunki বা WAR-2 এর মারপিটে নায়ক। আপনি বা আমিই হয়তো বা সেই হতভাগা বাপ সময় হয়েছে
নচিকেতার গানের সার্বিক সফলতার। সেই ‘বৃদ্ধাশ্রম’-
‘পালকি’ দেখেছি– দেখেছি পিতার অঝোর, বাধভাঙ্গা ক্রন্দন। ধার দেনা করে সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়ে কন্যা বিদায়ের
দৃশ্য। যাতে কিনা শশুরালয়েও কন্যা তার উপযুক্ত সম্মান পায়। পেয়েছে ও দারুণ একটা Certificate – Divorce।তথ্য সংগ্রহে যা উঠে এসেছে, পনের টাকা না শোধ করতে পারায় মেয়েকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দেওয়া। A থেকে
Z পর্যন্ত তথাকথিত বিকশিত সমাজ ব্যবস্থায় শ্বশুরবাড়ীর সবার হাতে উত্তম-মধ্যম, শেষে মৃত্যুর হুমকি ইত্যাদি ইত্যাদি।
দশমীর রাতে খবর পেলাম ‘মহামায়া’ শববাহী যানে ভিড় ঠেলে চলছে গন্তব্যস্থলে। পরিবর্তনের ধারক ও বাহক আমরা
পেছন পেছন– ‘হরি বোল বোল হরি’। সত্যমেভ্ জয়তে
পরবর্তী রম্যরচনার ক্যাপশান হয়তো হবে ‘পালকী থেকে শববাহী যান’ – রাজ্যব্যাপী সিঁদুর খেলায় মত্ত –‘ সদা
সুহাগন রহো’– আজ বিজয়া দশমী মহামায়া-র কৈলাশ যাওয়া হলো না আর।
ভাবতে ভাবতেই কেটে গেল বাঙালীর জীবনের সবচেয়ে দ্রুততম চারটি দিন সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী আর দশমী —
বিশ্রাম করলাম। ডাক পেলাম কার্ণিভালের এর সঞ্চালনার। ব্লু-লোটাস ক্লাবের পক্ষ থেকে। চিরাচরিত ভঙ্গিতে আর দ্রুততম
দিনগুলোর অভিজ্ঞতাকে সঙ্গে নিয়ে চিৎকার করে জানান দিলাম ‘আর ড্রাগস্ নয়, নয় ব্যাভিচার, গার্হস্থ্য হিংসা, আসুন
সবুজে ভরিয়ে তুলি পাহাড়ী রাজ্যকে। জল অপচয় রোধে এগিয়ে আসুন। ভুলিনি শ্রদ্ধা জানাতে ‘ও মাঝিরে’ শিল্পী জুবিন
গর্গকে আর নৃত্য গুরু হীরা ম্যাডামকেও। গগনভেদী চিৎকারে আকাশ বাতাসকে এক করেছি ‘এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার
মন্ত্রে। হাঁফিয়ে গেছি আমি। সমাধান সূত্রের খোঁজে আগন্তুক হয়ে, যাযাবর হয়ে এদিক-ওদিক চষে বেড়াচ্ছি। জানেন তো
তপুর কাজ থেকে বিতাড়ন-আর তার মায়ের অকাল মৃত্যু জানিনা তপু কোথায়, কেমন আছে ও। মহামায়া আছেন তারা
হয়ে তবে জুবিন হয়ে নয় লক্ষ লক্ষ লোকের ভালবাসায় স্নাত জুবিন সবার হৃদয়ে আর মহামায়া জীবন সংগ্রামে
হারিয়ে যাওয়া প্রস্ফুটিত প্রাণ। ফেরিওয়ালা কেমন আছে? নিশ্চয় বিহার চলে গেছে নিজের বাড়ী।
আপনি, আমি, বেক বেঞ্চার সবাই চেষ্টা করছি একটা বিকশিত সমাজ ব্যবস্থার উপহার দিতে। ব্যভিচারগুলোকে
চুরমার করে দিয়ে শান্তির ধ্বজা উড়িয়ে দিতে। কিন্তু কেমন যেন মনে হয়। এই যে আমি-আপনি-আপনারা সবাই সমাজ
গঠনে উঠে পড়ে লেগেছি আমরা কি সত্যিই বরো কলেবরে সমাজ গঠন চাইছি না কি এই আমি বেশ ভালো আছি’ এই
সাবেকী চিন্তায় মশগুল হয়ে আছি? প্রশ্নটা রাখলাম আমাদের সবার জন্য। আপনি তো হেঁটে হেঁটে পুজো দেখতেন
আপনার ছেলেরাই বা এনফিল্ড কেনার বৈধতা পেলো কোথায়? আপনি তো আপনার বাবার সঙ্গে ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধায় ডুবে
থাকতেন? আপনার মেয়ে আজ আপনাকে অপমানিত করলো? তাও স্বামীজিকে স্বাক্ষী রেখে? আমি তো কোনদিন কোন
নেশা করিনি– কেন বুবাই আজ সুরা থেকে সিরিঞ্জে পদার্পণ করলো? ওহ বুঝেছি গুরুকূল আজ আর নেই এখন e-
class, digital India.
আসলে ভুলে গেছিলাম —
আসলে ‘সময় বদলে গেছে’, তাই না? কাশ ফুল গুচ্ছও দোলা দেয় শরৎ-এর ছোঁয়া লাগাতে– কিন্তু লাল রং,
পাউডার আর সিরিঞ্জের দাপটে শরৎ-এর স্নিগ্ধতা হারিয়েছে বেশীর ভাগটা। শিউলির গন্ধ লাগে না নাকে ঢাকের তালে
ছন্দ আছে কিন্তু Disc Jockey-এর ছন্দে হার মানে। সেকালের বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র, সুভাষ বোস, অরবিন্দ, এ.পি.জে
আজ আর দেখা যায় না। সেই আত্মত্যাগ, বলিদান, জীব-প্রেম, সবকিছুতেই কেমন একটা ভাঁটার টান। একটা অজানা
দৈত্য ভর করেছে সমাজ ব্যবস্থায়, তার রূপরেখায়। দৈত্যের করাল আঘাতে মৃণ্ময়ী মা ও ভয়ার্ত অসুর বিনাস হয়নি —
বাড় বাড়ন্ত এখনো আছে
ঐ দেখুন লক্ষী দেবী আসছে ধনসম্পত্তি নিয়ে। আপনার আমার ছেলের এনফিল্ডের তেলের টাকার অভাব হবে না।
ঘটা করে করি চলুন লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা। তবে পেছনেও তাকাতে ভুলবেন না সামনেও না। মা-কালী আসছে তেরে
– বধ হবে সব দৈত্যের। অমাবস্যার রাতে পাপীদের মুন্ডচ্ছেদ হবে এবার। তনু- মহামায়া, ফেরিওয়ালারা ফ্যালফ্যাল করে
তাকিয়ে আছে। প্রহর গুনছে আরো একটা পরিবর্তনের, বিকাশের। সময় আছে চলুন সাদা পায়রা উড়িয়ে দিই- সময়
বলেছে সময়ের মতো করে, মানুষও বদলাক মানুষের মতো করে মনুষ্যত্বকে জীবিত রেখে।
প্রতিটি ঘর হোক শান্তির নীড়- আমরা ভাবছি “এই বেশ ভালো আছি”? না একদম না। পেছনের ঘরে গিয়ে
শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে একবার ভাবি চলুন কি করলাম গত ৫০টি বসন্তে। সমাজ গঠনে আমার আপনার দায়বদ্ধতার
হিসাব-নিকাশ করার বোধহয় সঠিক সময় আজ।
নতুবা যে ১৪৩৩ বঙ্গাব্দের দেবী বোধন কঠিন হবে। মা-দুর্গার সংখ্যাধিক্যে অসুরবধ হবে অগণিত। সময় আছে —
বদলে যাওয়া সময়কে আলতোভাবে বেঁধে রাখার দায় দায়িত্বটা না হয় আমরাই নিলাম। শুধু বিকাশের স্বপ্নে, শ্রেষ্ঠত্বের স্বপ্নে
আর একরাশ শান্তির স্বপ্ন আর সুস্থ সমাজ গঠনের প্রত্যাশায় ডুব দিয়ে আরো একবার বলি ‘বল দুর্গা মাইকি-জয়’।